খাগান থেকে জার্মানির বনে! ড্যাফোডিলের আবু নওফেল সাজিদ

Campus Event
National Mar 09, 2025 Hit: 94

What is noted,Can't be rotted — যদি ক্লাসিক্যাল ফিলোসোফি থেকে চিন্তা করি তাহলে বোধহয় কথাটি  জীবন এবং সময়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জীবনের মূল্যবোধ সময়ভেদে নানারকম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই হয়তো রবার্ট জে অপেনহেইমার বলেছেন, Few people Laughed, Few people cried and Most of them are Silent. গল্পের অবস্থান ও তেমন সময়ের সাথে একটি পরিবর্তিত রুপের, যা জীবনকে নতুন এক ডায়মেনশনে নিয়ে এসেছে।

আবু নওফেল সাজিদ একজন সাধারণ যুবক যিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার তিখাসার নামক গ্রামের অধিবাসী। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা তবে সময়ের বেড়াজালে বিভিন্ন প্রতিঘাত যা রয়েছে আষ্টে-পিষ্ঠে। বাকি দশজনের মতোই স্বপ্ন ছিল জীবনে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। স্বপ্নকে লালন করে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সংকল্প ছিল তার। সেই স্বপ্নের পথ ধরে এগিয়ে চলার শুরু হয়ড্যাফোডিলইন্টারন্যাশনালইউনিভার্সিটিরসাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগে ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ধাপে বাবাকে সড়ক দুর্ঘটনায় হারানোর পরে জীবন অনেকটা সংকুচিত হয়ে পরে। তবে সেখানেই হয়তো গল্পের মোড়, শুরু হয় একটি নতুন পথের উদ্দেশ্যে। সৃষ্টিকর্তা হয়তো চেয়েছেন জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবেন তাই নতুন করে শুরু হলো পথচলা। যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না, তবে শিক্ষকদের সহোযোগিতায় তার একাডেমিক ক্যারিয়ার আবার ক্ষাণিকটা এগোতে শুরু হলো। তার ধারণায় এ যাত্রায় কাছের মানুষের অবদান কাগজে লিপিবদ্ধ করার মত সময় এখনো হয়ে উঠেনি কিন্তু জীবনের সকল সিদ্ধান্তে তার পরিবার ঢাল হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেসাজিদ খুবই শান্ত স্বভাব এবং মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। তেমন বন্ধু সমাজ তৈরি নাহ হলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনেকেশন ক্লাব এবং বিতর্ক ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক  উন্নয়নমূলক কাজ সহ বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক কাজে সাংবাদিকতা মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রতিটি মানুষের জীবনে হয়তো একজন ব্যাক্তির আগমন ঘটে পরবর্তীতে যেখানে সে গল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তেমনভাবে হয়তো বিভাগীয় প্রধান সহকারি অধ্যাপক  আফতাব হোসাইনের অবতারণা হয় এই গল্পে। কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট থাকার দরুণ একদিন  রাতে তিনি জানার চেষ্টা করেন "তার দ্বারা কি সম্ভব?"। প্রফেসর সেদিন হয়তো তাকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন গল্পের শেষ পরিণতি এখানেই নয়, যুদ্ধ করে এগোতে হবে বহুপথ। তার চোখে তিনি নিলস বোরের থেকে কম কিছু নয় বলে সে বিশ্বাস করেন।

বিভিন্ন মানুষ,ধর্ম,বর্ণ, সংস্কৃতির মাঝে নিজেকে খুজে নেওয়ার প্রচেষ্টায় কাজ শুরু করলো তিনি। দেশের বিভিন্ন মূলধারার পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন গুলোয় লেখালেখির কাজ করতে লাগল। দিনশেষে অর্জনের দিক থেকে হিমালয় চুড়ায় ওঠার সাফল্য অর্জিত না হলেও কিছু নুড়ি কণাকে একত্রিত করার কিঞ্চিৎ অনুভব হয়তো প্রতিয়মান হলো। সৃজনশীলতা এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কাপড়ের ছোট একটি ব্যবসাও ছিল তার। সাবলীল এবং সিগ্ধ জীবন যেন খুবেই সহজ  যা ছিল তার চোখের ভাষায়। জীবন থেকে আসলে নেওয়ার তেমন কিছু নেই তবে অনুভূতি এবং সময়কে স্মৃতি রোমন্থন করে যায় বারংবার। নিজেকে জানার এবং ছাড়িয়ে যাওয়ার তীব্র আকাংখা ছিল তার চোখে।

"Fortune favours the braves"— জীবনে শেখার এই পর্যায়ে তার পরিচয় হয় সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাবিল খানের সাথে। তার দৃষ্টিতে সাহসিকতার জন্ম হয়তো এই শিক্ষক দিয়ে গিয়েছেন তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। তার মতে মানুষ তখনেই শিখতে পারে যখন সে প্রতিকূলতা সাথে নিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে যায়। তেমনি তিনি তার হাসিমূখে  কাবিল খানের সাথে উত্তরা যাবার পথের রিক্সায় শোনা জীবনের দূ:সহ দিন কাটিয়ে ওঠার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হোন। আমরা গল্পের দিকে এগোতে থাকি।

একজন বিচক্ষণ ব্যাক্তি বলেছিলেন "প্রকৃতি কখনো ফাকা স্থ্যান পছন্দ করে নাহ, সময়ের সাথে সে শূন্যস্থান  পূরণ করে নিবেই"। সাজিদের জীবন তেমনি নানা মতাদর্শ এবং বিশ্বাসের সাথে বেশ চলছিল। এক সুন্দর সকালে তিনি জানতে পারেন জার্মানির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডায়েচ়ে ভেলে  Deutsche Welle(DW) তে ইন্টারনশিপ করার সুযোগ সম্পর্কে। পরবর্তীতে তিনি বিভাগীয় প্রধানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং তিনি তাকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেওয়ার জন্য আব্দুল কাবিল খানের সাথে কথা বলার নির্দেশ দেন।

কাবিল খান বেশকিছু নির্দেশনা প্রদান করেন যাহ নি:সন্দেহে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করে দেয় এই চরিত্রটির জন্য। ফলস্বরূপ ইন্টারভিউ সহ সকল প্রক্রিয়ার পরে জার্মানিতে ৩ মাসের জন্য ইন্টারশিপ করার সুযোগ পান। তিনি অতি সাধারণ এক অবস্থা থেকে হয়তো সামান্য পালক যুক্ত করতে চলেছেন এই যাত্রায়। গল্পের এই প্রক্রিয়ায় আফতাব হোসেন এবং আব্দুল কাবিল খানের সামগ্রিক প্রয়াসে যাত্রা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়।

গল্পটা একজন তীর হারিয়ে ফেলা মাঝির। যাহ সৃষ্টিকর্তার বিশেষ করুণায় আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠতে চলেছে। যাত্রাপথে আরো বিশেষ কিছু মানুষের অবদান রয়েছে সে গল্প না হয় আজ থাক। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এ অর্জন হয়তো তেমন চুড়ান্ত মাত্রা যোগ করে নাহ কেননা জীবন হচ্ছে একটা চকলেটের বাক্স, কখন কোন চকলেটটি উঠবে তা কারোর জানা নেই। তিনি বিশ্বাস করেন হয়তো "এই দিনেই দিন নয়, আরো বাকি আছে"। ঘোড়দৌড়ের সবচেয়ে বাজে ঘোড়াটা হয়তো সর্বোচ্চ সফলতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সেই মতবাদকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং দশজন পিছিয়ে থাকা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই হয়তো গল্পের সাজিদের আজ এই পথচলা।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট যোগে জার্মানির বন শহরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন সাজিদ। আমরা তার উত্তোররোত্তর সাফল্য কামনা করি।